সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১০ অপরাহ্ন
মাওলানা আবদুল জাব্বার:
ইসলামের বিধান হলো, কেউ হারাম পথে সম্পদ উপার্জন করবে না। এর পরও যদি কেউ শয়তানের ধোঁকায় অন্যায় পথে সম্পদ উপার্জন করে ফেলে, অথবা কোনোভাবে যদি হারাম সম্পদ কারও কাছে জমা হয়ে যায়। তাহলে এজন্য এই পাপ থেকে তওবা করা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে তওবার অপরিহার্য একটি শর্ত হলো যার অধিকার নষ্ট হয়েছে, তার হক (অধিকার) যথাযথভাবে আদায় করে দেওয়া। এ অবস্থায় তওবাকারীর সামনে স্বাভাবিকভাবে কয়েকটি বিষয় আসে।
এক. তওবাকারী নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির হক নষ্ট করেছে। এ ক্ষেত্রে সে যেভাবেই হোক পাওনাদারের হক তার কাছেই পৌঁছে দেবে। বিখ্যাত তাবেঈ হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি কারও কোনো সম্পদ (অন্যায়ভাবে) কুক্ষিগত করল, অথবা কারও থেকে কোনো কিছু চুরি করল অতঃপর এমন পদ্ধতিতে সেই সম্পদ তার কাছে পৌঁছে দিতে চাইল যাতে সে জানতে না পারে; তাহলে সে তা করতে পারবে। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ২৩৫৯৬
দুই. সুনির্দিষ্টভাবে কারও হক নষ্ট করেনি বরং জনগণের সম্মিলিত হক নষ্ট করেছে। তাহলে আল্লামা ইবনুল জাওযি (রহ.)-এর ভাষ্যমতে যেই খাত থেকে অন্যায়ভাবে নিয়েছে সেখানেই হক পৌঁছে দেবে। যেমন : রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নিয়ে থাকলে সেখানে পৌঁছে দেবে। এই সম্পদ গরিবদের মাঝে সদকা করলে হবে না। জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম : ২৬৬
তিন. কারও হক নষ্ট করা ছাড়া শরিয়ত কর্র্তৃক হারামপন্থায় উপার্জিত সম্পদের মালিক হয়েছে। যেমন শূকর, মদ ইত্যাদি বিক্রয় করা সম্পদ। জুয়ার মাধ্যমে উপার্জিত সম্পদ। শরিয়তের অননুমোদিত পন্থায় ক্রয়কৃত সম্পদ। এ ক্ষেত্রে বিধান হলো ওই সম্পদ সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত সদকা করে দেবে।
চার. তওবাকারী কার থেকে বা কোন খাত থেকে নিয়েছে তা জানে না। তার পক্ষে জানা সম্ভবও নয়। তাহলে পূর্বের প্রকারের ন্যায় এ ক্ষেত্রেও সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত সদকা করে দেবে।
এক ব্যক্তি বিশিষ্ট তাবেঈ হজরত আতা (রহ.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, আমি যখন অল্প বয়স্ক ছিলাম তখন এমন পন্থায় মাল উপার্জন করতাম, যা আমি এখন পছন্দ করি না (অবৈধ পন্থায়)। আমি তওবা করতে চাই। তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি এ মাল তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দাও। সে বলল, আমি তো এখন তাদের সম্পর্কে কিছুই জানি না। তিনি বললেন, তাহলে তা সদকা করে দাও। এতে তোমার কোনো সওয়াব হবে না। তুমি এর গোনাহ থেকে মুক্তি পাবে কি না তাও বলতে পারব না। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ২৩৫৯৪
হজরত মুজাহিদ (রহ.) থেকেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ হারাম মাল সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত সদকা করে দেবে। তবে এই সদকার বিধান তখনই প্রযোজ্য যখন হকদারের কাছে তা পৌঁছানো সম্ভব হবে না। নতুবা আসল বিধান হলো পাওনা তার হকদারকে পৌঁছে দেওয়া।
হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এমন শরীর কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যা হারাম দ্বারা বর্ধিত। জাহান্নামই তার উপযুক্ত স্থান। মুসনাদে আহমাদ : ১৪৪৪১
নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার হজরত কাব বিন উজরাহ (রা.)-কে ডেকে বললেন, হে কাব! শুনে রাখো, ওই দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যা হারাম হতে সৃষ্ট। কেননা জাহান্নামের আগুনই তার অধিক উপযোগী। জামে তিরমিজি : ৬১৪
ভয়েস/আআ/সূত্র: দেশরূপান্তর